Friday, July 17, 2015

সমকামিতা সম্পর্কে যা না জানালেই নয়


আমি যা জানি... 


একটা ছোট ঘটনা, একটা অবাধ্য জাতি, শেষ পরিণতি...!!!

আজকে যারা এই ন্যাক্কারজনক বিষয়টি নিয়ে লাফালাফি করছে, আগ্রহ প্রকাশ করছে তারাই প্রথম নয়। এর আগেও পৃথিবীতে এমন সম্প্রদায় ছিল। তারা চেয়েছিল আল্লাহ্‌ পুরুষদের জন্য যা নির্দিষ্ট করেছেন তা বাদ দিয়ে যা হারাম করেছেন তা গ্রহন করতে।

অপবিত্র ভাবে নিজেদের চাহিদা পুরন করতে গিয়ে তারা মানব জাতির বিস্তারকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলো। অনুর্বর জমিতে বীজ বপন করলে যেমন তা অঙ্কুরিত হয়ে জীবনের আলো দেখতে পাবেনা, ঠিক তেমনি মানব জাতিও এভাবে চলতে থাকলে একদিন বংশ বিস্তারের ধারা বন্ধ হয়ে যাবে।

লুত (আঃ) এর জাতির কৃত পাপের মত এমন জঘন্য পাপ পৃথিবীর অন্য কোন জাতি এর আগে করে নি। এটা এমনি এক মানসিক ব্যাধি যা শারীরিক ব্যাধির মতই সংক্রামক।

তাইতো মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা এই জঘন্য জাতিকে দুনিয়া থেকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেন। সূরা হুদের ৭৭ নাম্বার আয়াতে তাদের হুমকি ধামকি ও শেষ পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে।

জিব্রাইল ও মীকাঈল (আঃ) সেদিন প্রথমে গিয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এর বাসায়। সেখানে গিয়ে তাঁর ৯০ বছর বয়সী স্ত্রীকে পুত্র ইসহাক (আঃ) ও নাতি ইয়াকুব (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন। তখন ইব্রাহিম (আঃ) এর বয়স ১০০ বছর।

(তাফসিরে ইবনে কাসির, সূরা হুদ, আয়াত ৬৯)

জানার জন্যঃ ইব্রাহিম আঃ এর ২য় স্ত্রীর নাম হাজেরা এবং সন্তানের নাম ইসমাইল আঃ।

ফেরেশতারা আরও বলেন যে, তাদের আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল লুত (আঃ) এর জাতিকে তাদের অবাধ্যতার কারনে সমূলে ধ্বংস করা। সে জাতির প্রধান পাপ ছিল সমকামিতা করা। ফেরেশতাদের এ কথা শুনে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী সারা (আঃ) হেঁসে দিলেন। হাসবেন নাইবা কেন। ওই জাতি ছিল পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট জাতি। তাদের জন্য এমন শাস্তিই কাম্য।

ইব্রাহিম (আঃ) পড়ে গেলেন চিন্তায়। কারন সে জাতির মধ্যে হজরত লুত (আঃ) তখনো সপরিবারে জীবিত। তাই ফেরেশতাদের কাছে বার বার জিজ্ঞেস করলেন, কোন গ্রামে যদি ৩০০ মুসলমান জীবিত থাকে তাহলে সে গ্রাম ধ্বংস করা হবে কিনা? ফেরেশতারা উত্তর দিলেন, “না।” এভাবে ইব্রাহিম (আঃ) ৪ বার প্রশ্ন করলেন। ৪০ জন থাকলে, ৩০ জন থাকলে, ৫ জন থাকলে, অবশেষে জিজ্ঞেস করলেন যদি গ্রামে ১ জন মুসলমান থাকে তাহলে সে গ্রাম কি ধ্বংস করা হবে?

উত্তরে প্রতিবারই ফেরেশতারা বলেন, “না, কোন গ্রামে যদি ১ জন মুসলমান ও অবশিষ্ট থাকে তবে সে গ্রাম ধ্বংস করা হবে না। তারা আরও বললেন যে ওই গ্রাম থেকে হজরত লুত (আঃ) কে ও মুমিনদের সরিয়ে তারপরে ওই গ্রাম ধ্বংস করা হবে”। এ কথা শুনে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) শান্ত হলেন।

ভাতিজা লুত (আঃ) ও মুমিনদের জন্য আল্লাহর বন্ধু ইব্রাহিম (আঃ) এর অন্তর কেঁদে উঠলো। তাইতো তিনি বার বার আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে লাগলো যাতে ওই গ্রামের উপরে যে গজব আসবে তা থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিনা।

কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কে চুপ করিয়ে দিলেন। আল্লাহ্‌ এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে ওই অপবিত্র জাতির ব্যপারে সুপারিশ করা থেকে ইব্রাহিম (আঃ) কে বিরত থাকতে বললেন। তাদেরকে ও তাদের বংশধরদেরকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলবেন। আরও বললেন যে, ওদের চরম শাস্তির ব্যপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়।

(আল কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৭৬)

ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুপুর বেলায় ফেরেশতারা নাহরে সুদুমে পৌছায়। সেখানে লুত (আঃ) এর কন্যা পানি নিতে আসলে তাদের সাথে দেখা হয়। তখন ফেরেশতারা বললেন, এখানে আমরা কোথায় অবস্থান করতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন যে, আপনারা এখানে থাকুন আমি এসে উত্তর দিচ্ছি। তিনি এই ভয়ে ভীত হলেন যে এই কওমের লোকেরা এমন সুন্দর পুরুষদের দেখলে তাদের অপদস্থ করবেই। তিনি তাঁর পিতা হজরত লুত (আঃ) কে গিয়ে বললেন যে, “শহরের দরজায় কিছু যুবকদের দেখে আসলাম। যাদের মত সুন্দর লোক আমি জীবনেও দেখিনি। তাদেরকে নিয়ে আসুন নয়তো আপনার কওমের লোকেরা তাদের উপরে জুলুম করবে”।

ওই গ্রামের লোকেরা লুত (আঃ) কে আগে থেকে বলে রেখেছিল শহরে কোন বিদেশী আসলে তাদেরকে আশ্রয় না দিয়ে পাঠিয়ে দিতে। তখন লুত (আঃ) গোপনীয় ভাবে তাদের নিজ বাড়িতে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসলেন। এবং ওই যালিম সম্প্রদায়ের কথা ভেবে শঙ্কিত হলেন। কিন্তু কোন এক ভাবে এ খবর প্রকাশ হয়ে পড়ে। অনেকের মতে লুত (আঃ) এর স্ত্রী কওমের লোকদের বলে দেয়। খবর শুনে কওমের লোক ছুটতে ছুটতে চলে আসলো। পুরুষ লোকের সাথে দুষ্কর্ম করা তাদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। তারা এসে মেহমানদেরকে তাদের হাতে তুলে দিতে বললো।


আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমরা কি গোটা দুনিয়ার মধ্যে পুরুষদের কাছে যাও? এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা পরিহার করে থাকো? বরং তোমরা তো সীমা-ই অতিক্রম করে গেছো৷”

(সূরা শুয়ারা, আয়াত ১৬৫-১৬৬)

তখন লুত (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদেরকে অনেক উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, “তোমাদের অভ্যাস পরিত্যাগ কর, স্ত্রী লোকদের দ্বারা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি পূর্ণ কর”।

সে লোকেরা যখন কোন কথাই শুনল না তখন লুত (আঃ) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করল।

নিকৃষ্ট লোকগুলো তখন লুত (আঃ) এর দরজায় দাঁড়ানো। ওদিকে লুত (আঃ) এর মন মরা অবস্থা দেখে জিব্রাইল (আঃ) বেরিয়ে এসে নবীকে অভয় দিয়ে বলল, তারা আপনার বা আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আমরা আপনার রবের প্রেরিত ফেরেশতা। এবং পরিবার ও মুমিনদের নিয়ে ভোর হবার আগেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বললেন। যাতে আল্লাহর গজব নবীকে স্পর্শ করতে না পারে। তবে তাঁর স্ত্রী ব্যতীত। কারন সে ছিল ওই লোকদের সাহায্যকারী। এও বলা হল, কেউ যেন চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে না তাকায়।

তখন জিব্রাইল (আঃ) তাঁর নিজের রুপ প্রকাশ করলেন ও তাঁর ডানা দ্বারা সামনে থাকা অবাধ্য লোকদের মুখে আঘাত করলেন। সাথে সাথে তারা অন্ধ হয়ে গেল।

“তারপর যখন আমার ফায়সালার সময় এসে গেলো, আমি গোটা জনপদটি উল্‌টে দিলাম এবং তার ওপর পাকা মাটির পাথর অবিরামভাবে বর্ষণ করলাম। যার মধ্য থেকে প্রত্যেকটি পাথর তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল৷ আর জালেমদের থেকে এ শাস্তি মোটেই দূরে নয়৷”

(আল কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৮২-৮৩)


বর্ণিত আছে সেখানে মোট ৪ টা গ্রাম ছিল যার বড়টির নাম ছিল সুদুম। অন্য মতে, সেখানে তিনটি গ্রাম ছিল ও প্রতি গ্রামে ১ লক্ষ করে লোক বাস করত। সমকামিতার কারনে আল্লাহ্‌ ওই পুরো গ্রামগুলিকে উলটিয়ে দেন। জিব্রাইল (আঃ) তাঁর ডান পাশের ডানা দ্বারা ওই জনপদকে মাটি থেকে তুলে নেন। এবং সম্পূর্ণ উল্টিয়ে সজোরে মাটিতেই আঘাত করেন। যার ফলে সেখানে আগে কোন মানুষ বা ঘরবাড়ি ছিল তা মনে হতো না।

আর আল্লাহ্‌ তায়ালা আকাশ থেকে পোড়া মাটির পাথর নিক্ষেপ করেন। যার প্রতিটা পাথরের কোনটা কার উপর পরবে তা নির্ধারণ করা ছিল। সমকামী লোকদের কেউ অন্য এলাকায় গিয়ে থাকলে পাথর সেখানে গিয়ে তার উপর পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করত।

এভাবেই আল্লাহ্‌ তায়ালা পৃথিবীর বুক থেকে এমন বদমাইশদেরকে মুছে ফেলেন। এখন আবার তাদের মতো আরেকদল এই খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আল্লাহ্‌ মুসলমানদেরকে এমন চরম ঘৃণিত কাজ থেকে পবিত্র রাখুক।



আমীন।





সহায়ক তাফসীর গ্রন্থঃ

১। তাফসীর ইবনে কাসির (মোট ১৯ খণ্ড)

২। তাফসীরে ফী জিলালিল কোরআন (মোট ২২ খণ্ড)

৩। তাফহিমুল কোরআন (মোট ১৯ খণ্ড)


ভুলভ্রান্তি প্রকাশ পেলে ও মতামত কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করছি।